নামাজ আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সেতুবন্ধন
- নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ, সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত, বেহেশতের চাবি। নামাজ পড়লে শরীর ভালো থাকে, মনে প্রশান্তি আসে। মুখে ওজুর পানির ছোঁয়া লাগার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ভেতর-বাইরে এক ধরনের শীতলতা অনুভব হয়। পবিত্র কুরআনের ৮২ জায়গায় নামাজের তাগিদ করা হয়েছে। নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা নানা রকম কল্যাণ দান করেন। নামাজ সব খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘(হে নবী!) আপনি নামাজ কায়েম করুন। নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সূরা আনকাবুত : ৪৫)। অথচ এ নামাজ সম্পর্কে আমরা উদাসীন। উদাসীনদের ব্যাপারে ধমক দিয়ে কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাজ আদায়কারীর, যারা নিজেদের নামাজ আদায়ে অমনোযোগী!’ (সুরা মাউন ১০৭ : ৪-৫) অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘তোমরা নামাজের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের প্রতি এবং বিনীতভাবে দাঁড়াও আল্লাহর উদ্দেশ্যে।’ (সুরা বাকারা : ২৩৮)
- সুরা মাআরিজের ৩৪ ও ৩৫নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যারা নিজেদের নামাজের হেফাজত করে, এরাই আল্লাহর জান্নাতে মর্যাদাসহকারে প্রবেশ করবে।’ সুরা মুমিনুনের ১ থেকে ২নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অবশ্যই সফল হয়েছে মুমিনরা, যারা নিজের নামাজ আদায় করে বিনীতভাবে।’ সুরা নিসার ১৪২নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে, তিনি তাদের ধোঁকায় ফেলে শাস্তি দেন এবং তারা যখন নামাজে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, লোক দেখানোর জন্য, তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।’
- অথচ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়। তাইতো আজানের ধ্বনি কানে আসার সঙ্গে সঙ্গে মুমিনের হৃদয় আলোড়িত হয়ে ওঠে। আল্লাহর দিদারের আশায় মন আকুল হয়ে যায়। নামাজি যখন ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ বলে মসজিদের দিকে ছোটে তখন শয়তান আক্ষেপ করে বলে, নামাজি তোমাকে ধোঁকা দিতে পারলাম না।
- নামাজ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এক অপূর্ব নেয়ামত। অথচ নামাজে আমরা তাড়াহুড়া করি। মসজিদে সময় দিতে চাই না। মসজিদে যেতে আমাদের ভালো লাগে না। ইমাম যখন নিয়ত বেঁধে সুরা-কেরাত পড়ে রুকুতে যায় তখন অনেকে দৌড়ে গিয়ে নামাজে দাঁড়াই। জুমার দিনে অনেকেই কেবল দুরাকাত ফরজ পড়ি। সুন্নত না পড়ে তাড়াহুড়া করে মসজিদ থেকে বেরিয়ে গল্পগুজবে মেতে উঠি।
- অনেকে মসজিদে গিয়ে মোবাইলটা বন্ধ কিংবা সাইলেন্ড করেন না! আমরা ডাক্তারের চেম্বারে গেলে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখি। কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার আগে মোবাইল বন্ধ রাখি। অথচ যিনি আমাদের প্রভু, আমার দুঃখ-যাতনা দূরকারী, আমার রিজিকদাতা, দোজখের আগুন থেকে মুক্তিদানকারী, যার সঙ্গে নামাজের মাধ্যমে আমরা কথা বলি, তার সামনে কীভাবে আমার মোবাইল ফোন বাজতে পারে! এসব গর্হিত কাজ। এসব থেকে বিরত থাকা চাই। আমার নামাজ যেন হয় এমন, ‘তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ! এমন না হলে অন্তত এ অনুভূতি অন্তরে জাগ্রত করÑ তবে নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে দেখছেন!’ (বুখারি : ৪৮)
লেখক : ওমর শাহ