কোরবানি কার কার ওপর ওয়াজিব?
ড. মুফতী মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী
- জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ কোরবানি করার দিন। এ দিনগুলোতে কোরবানি করার চেয়ে প্রিয় আর কিছুই হয় না আল্লাহ তায়ালার কাছে। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই কোরবানি আল্লাহর কাছে কুবুল হয়ে যায়। হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাঈল (আ.) এর আনুগত ও খোদাপ্রেম প্রকাশের স্মারণে পালিত কোরবানির মাধ্যমে অর্জন করা যায় আল্লাহর সন্তুষ্টি। অপর দিকে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি না করলে মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়ে দিয়েছন সে যেন আমাদের ঈদগাহে উপস্থিত না হয়। (হাকিম ২:৩৮৯)
- কাদের পক্ষ থেকে কোরবানি করতে হবে?
- শরীয়তে পরিভাষায় কোরবানির জন্য সামর্থ্যবান হবার ব্যাপারটি নিরূপন করা হয় আর্থিক সামর্থের মাধ্যমে। তাই কোরবানির দিনগুলোতে যদি কেউ শরীয়তের পরমাপে সম্পদশালী হয় তাহলে তার পক্ষ থেকে কোরবানি আদায় করতে হবে। সাড়ে সাত ভরি বা ৮৭.৪৮ গ্রাম স্বার্ণের মালিক হলে বা সাড়ে ৫২ ভরি বা ৬১২.৩৬ গ্রাম রূপার মালিক হলে অথবা উপরে যে কোন একটির বিক্রয় মূল্যের সম পরিমাণ নগদ টাকা থাকলে বা ব্যবসায়িক সম্পদ থাকলে অথবা স্বর্ণ রূপা, নগদ টাকা ও ব্যবসায়িক সম্পদ সবকটি মিলিয়ে স্বর্ণ বা রূপার নিসাব পরিমাণ হলেও সম্পদশালী হিসেবে গণ্য হবে।
- বর্তমান সময়ে যেহেতু রূপার দাম কম তাই আমরা রূপার মার্কেট মূল্য হিসাব করব। রূপা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে দেখেছি, যদি এ সময় তাদের কাছে রূপা বিক্রয় করা হয় তাহলে তারা কেউ ৪০০, কেউ ৫০০, কেউ ৫৫০ টাকা করে দিবেন বলেছেন। তাই সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য ৫৫০ টাকা ধরে সাড়ে ৫২ ভরি রূপার মূল্য আসে ২৮৮৭৫ টাকা। তাই কেউ যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ ও ঋণের অতিরিক্ত ২৮৮৭৫ টাকার মালিক হয় তাহলে সম্পদশালী হিসেবে গণ্য হবে। এ সম্পদ এক বছর নিজের কাছে থাকলে জাকত দিতে হয় কিন্তু কোরবানি ওয়াজিব হবার জন্য বর্ষপূর্তির শর্ত নেই। কোরবানির দিনগুলোতে টাকা, স্বর্ণ, রূপা বা ব্যবসায়ীক সম্পদ মিলে উক্ত পরিমাণ হলেই কোরবানি দিতে হবে।
- উল্লেখ্য, টাকা যা আমরা কাগজের ব্যবহার করে থাকি তা কিন্তু মূলত স্বর্ণ ও রূপার বিপরীতে আমরা বানিয়ে থাকি ও ব্যবহার করে থাকি। তাই নগদ টাকাও রূপার হুকুম রাখবে।
- কোরবানি কী শুধু পরিবারপ্রধান দিবেন?
- আমাদের দেশে অধিকাংশ স্থানে শুধুমাত্র পরিবার প্রধানের পক্ষ থেকে কোরবানি দেয়া হয়। এটা ভুল পদ্ধতি। ইসলাম ব্যক্তি স্বাধীনতায় ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তাই প্রত্যেক ব্যক্তি আলাদা আলাদাভাবে সম্পদশালী হলে প্রত্যেকের পক্ষ থেকে কোরবানি দিতে হবে।
- মহিলাদের পক্ষ থেকে কোরবানি
- মহিলারাও কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে সম্পদশালী হতে পারেন। পিতার পক্ষ থেকে উপহার পাবার মাধ্যমে, স্বামীর পক্ষ থেকে দেনমোহর প্রাপ্তির মাধ্যমে, চাকরি করার সুবাদে, ব্যবসা করার মাধ্যমে, উত্তরাধিকার মাধ্যমে বা অন্য কোন উপায়ে। যদি কোন মহিলা নিজস্ব ভাবে সম্পদশালী হন তাহলে তার নিজের পক্ষ থেকে ও কোরবানি করতে হবে। নিজ দায়িত্বে কোরবানি না করলে গোনাহগার হবে। তবে তার পক্ষ থেকে স্বামী, পিতা ছেলে, ভাই বা অন্য কেউ আদায় করে দিলে সে দায়িত্বমুক্ত হবে।
- বাচ্চাদের পক্ষ থেকে কোরবানি
- অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয় না। বাচ্চারা সম্পদশালী হলেও তার পক্ষ থেকে কোরবানি করা ওয়াজবি হয় না। তবে তার পক্ষ থেকে অভিভাবক কোরবানি করলে তা জায়েয হবে। পিতা বা মাতা যদি আলাদাভাবে সম্পদশালী না হন তার পক্ষ থেকেও কোরবানি করলে তা আদায় হবে। মুসাফিরের পক্ষ থেকে কোরবানি করা ওয়াজিব নয়। তবে আদায় করলে তা জায়িয হবে।
- গরীব ব্যক্তির পক্ষ থেকেও কোরবানি নেই। তবে আদায় করলে তা জায়িয হবে। যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব তারা যেন সানন্দে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করে সুন্নতে ইবরাহিমি আদায় করতে পারি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দিন।