• ||
  • Sunday, February 2nd, 2025
  • ||

অধীনস্থ কর্মীদের সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশ

অধীনস্থ কর্মীদের সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশ

মুশফিক হাবীব

  • পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাজ সূচারুরূপে আঞ্জাম দিতে অনেকেই কর্ম-সহযোগী নিয়োগ দিয়ে থাকেন। দোকানে, শপিংমলে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রাখেন সেলসম্যান। হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোয় রাখা হয় হোটেল বয়। এসব কাজের লোকদের মাঝে পুরুষ যেমন আছে, তেমনি আছে নারীও। এরা যৎসামান্য বেতনের বিনিময়ে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে।
  • কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, কখনও ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যদি এদের থেকে কোনো ভুল সংঘটিত হয়ে যায় তাহলে ধমকি-তিরস্কার আর বকাঝকা সহ্য করতে হয় তাদের। বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের ওপর চলে অকথ্য ও অমানবিক নির্যাতন। অতি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গৃহকর্তা বা গৃহকর্ত্রীর হাতে উত্তপ্ত খুন্তি দিয়ে শরীরে ছ্যাকা দেওয়ার ঘটনাও প্রকাশিত হচ্ছে দৈনিক পত্রিকার পাতায়। এমনকি নিষ্ঠুরতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে মেরে ফেলার মতো রেকর্ডও শোনা যায় কোথাও কোথাও।
  • অথচ রাসুল (সা.)-এর আদর্শ হলো, কাজের লোকদের সঙ্গে অত্যন্ত স্নেহপূর্ণ ও মানবিক আচরণ করা। তারা বড় ধরনের কোনো ভুল করে বসলে মমতার সঙ্গে সতর্ক করে শুধরে দিতে হবে আর ছোট ভুল প্রকাশ পেলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আনাস বিন মালেক (রা.) দীর্ঘ দশ বছর রাসুল (সা.)-এর ঘরে ও বাইরে নানা কাজ করেছেন। তার সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর আচরণ কেমন ছিল সে বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মদিনায় দশ বছর রাসুল (সা.)-এর খেদমত করেছি। আমি ছিলাম অল্পবয়স্ক বালক। আমার সব কাজ রাসুলের মর্জি মাফিক হত না। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় তিনি কখনও আমাকে ধমক দেননি এবং বলেননি যে, এটা কেন করেছ বা এটা কেন করনি?’ (আবু দাউদ : ৪৭৭৪)
  • অনেক সময় দেখা যায়, কাজের লোকদেরকে অত্যন্ত নিচু দৃষ্টিতে দেখা হয়। নিজেদের আহারপর্ব শেষে খাবারের অবশিষ্টাংশ এদেরকে খেতে দেওয়া হয়। বা বাজার থেকে সরবরাহকৃত উন্নতমানের খাবার পরিবেশিত হয় মালিকপক্ষের দস্তরখানে আর বেচারি কাজের মেয়ের জন্য বরাদ্দ থাকে অনুন্নত দায়সারা গোছের কিছুর ব্যবস্থা। পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজ সন্তানের জন্য শহরের অত্যাধুনিক শপিংমল থেকে কেনা হয় নামিদামি ব্র্যান্ডের পোশাক, ঠিক সন্তানের বয়সি কাজের মেয়েটি বা ছেলেটির হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ফুটপাথ থেকে কিনে আনা পুরনো ও ব্যবহৃত কাপড়ের সেট। অথচ ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে, তাদেরকেও নিজেদের মানের খাবার ও পোশাক প্রদান করা। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে তোমাদের অধীনস্ত করেছেন। অতএব, তোমরা যা খাও তাদেরকেও তা খাওয়াও আর তোমরা যা পর তাদেরকেও তা পরিধান করাও। তাদেরকে সাধ্যাতীত কোনো কাজের আদেশ কর না। যদি করেই থাক তবে তাদেরকে সহযোগিতা কর।’ (বুখারি : ২৫৪৫; মুসলিম : ১৬৬১)
  • হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কারও সামনে তার সেবক খাবার পরিবেশন করে, তখন সে যদি সেবককে সঙ্গে বসাতে না পারে তাহলে এক লোকমা বা দুই লোকমা যেন তার হাতে তুলে দেয়। কেননা খাবার তৈরির কষ্ট-ক্লেশ সেই সহ্য করেছে।’ (বুখারি : ২৫৫৭; মুসলিম : ১৬৬৩)
  • কাজের লোকরাও আমাদের মতোই মানুষ। তাই তাদের মানবীয় দুর্বলতাগুলো মেনে নেওয়া উচিত ও ভুল হয়ে গেলে ক্ষমা করা উচিত। একবার এক সাহাবি এসে রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি আমার কাজের লোককে কতবার ক্ষমা করব? রাসুল (সা.) চুপ থাকলেন। সাহাবি আবার জিজ্ঞাসা করলেন। তারপর রাসুল (সা.) বললেন, ‘প্রতিদিন সত্তরবার।’ (তিরমিজি : ১৯৪৯)
  • অধীনস্থ লোকদের সঙ্গে আমাদের আচরণ যদি রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুযায়ী হয় তাহলে এদের মুখে হাসি ফুটবে। আর এদের খুশিতে হেসে উঠবে আমাদের সমাজ ও চারপাশ। আমাদের ওপর খুশি হবেন আমাদের মহান প্রভু।
comment
Comments Added Successfully!