রমজান : জীবনের সেরা প্রাপ্তি
রমজান একটি অনন্য উপহার। রবের অপার দান। চৈত্রের কাঠফাটা রোদ্দুরে খাঁ খাঁ জমিনে এক পশলা বৃষ্টি। মরুর অগিড়বঝরা উত্তাপে এক ঝটকা হীমশীতল মুক্ত বায়ু। রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের ফল্গুধারা। নেক আমলের সমুদ্রে বাঁধভাঙা জোয়ার। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানব সন্তানের প্রতিটি নেক কাজের সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘কিন্তু সিয়াম আমারই জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিফল দান করব। বান্দা আমারই জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে।’ (মুসলিম : ২৫৯৭)
রমজান মুমিনজীবনের বসন্তকাল। এ মাসে জানড়বাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। জাহানড়বামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। এবং অবাদ্ধ শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। রাসুল (সা.) বলেন, রমজান মাস আসলে জানড়বাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। জাহানড়বামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শিকলে বন্দী করা হয়। (মুসলিম : ২৩৮৫)
একটি রমজান মুমিনের মহা মূল্যবান প্রাপ্তি। এ প্রাপ্তি যার কপালে জুটেছে, সে বড় ভাগ্যবান। যার জীবন থেকে চিরতরর জন্য হারিয়ে গেছে সে নিশ্চয়ই বঞ্চিত। হাদিসে এসেছে, হজরত তালহাহ বিন উবায়দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, দু’ব্যক্তি দূর-দূরান্ত থেকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে উপস্থিত হলো। তারা ছিলো খাঁটি মুসলমান। তাদের একজন ছিলো অপরজন অপেক্ষা শক্তিধর মুজাহিদ। তাদের মধ্যকার মুজাহিদ ব্যক্তি যুদ্ধ করে শহীদ হলো এবং অপরজন এক বছর পর মারা গেলো। তালহা (রা.) বলেন, আমি একদা স্বপেড়ব দেখলাম যে, আমি জানড়বাতের দরজায় উপস্থিত এবং আমি তাদের সাথে আছি। জানড়বাত থেকে এক ব্যক্তি বের হয়ে এলো এবং তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি পরে মারা গিয়েছিল তাকে জানড়বাতে প্রবেশের অনুমতি দিলো। সে পুনরায় বের হয়ে এসে শহীদ ব্যক্তিকে জানড়বাতে প্রবেশের অনুমতি দিলো। পরে সে আমার নিকট ফিরে এসে বললো, তুমি চলে যাও। কেননা তোমার (জানড়বাতে প্রবেশের) সময় এখনও হয়নি, তোমার পালা পরে। সকাল বেলা তালহা (রা.) উক্ত ঘটনা লোকদের নিকট বর্ণনা করলেন। তারা এতে বিস্ময়াভিভূত হলো। বিষয়টি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কানে গেলো এবং তারাও তাঁর কাছে ঘটনা বর্ণনা করলো। তিনি বলেন, কী কারণে তোমরা বিস্মিত হলে? তারা বললো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই ব্যক্তি তাদের দু’জনের মধ্যে অধিক শক্তিধর মুজাহিদ। তাকে শহীদ করা হয়েছে। অথচ অপর লোকটি তার আগেই জানড়বাতে প্রবেশ করলো। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, অপর লোকটি কি তার পরে এক বছর জীবিত থাকেনি? তারা বললো, হ্যাঁ। তিনি বলেন, সে একটি রমজান মাস পেয়েছে, রোজা রেখেছে এবং এক বছর যাবত এই এই নামাজ কি পড়েনি? তারা বললো, হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আসমান-জমিনের মধ্যে যে ব্যবধান রয়েছে, তাদের দু’জনের মধ্যে রয়েছে তার চেয়ে অধিক ব্যবধান। (আহমাদ : ১৪০৪, ৮১৯৫)
এ মাসের প্রতিটি রাত মহামূল্যবান। বছরের অন্যান্য রাত ও এর রাতের মাঝে রয়েছে বিস্তর ফারাক। নবীজি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ঈমানসহ পূণ্যের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (বুখারি : ৩৭)। এর মাঝেও একটি রাত আছে যার কথা স্বয়ং আল্লাহ মহাগ্রন্থ আল কুরআনে উল্লেখ করেছেন। ‘কদরের রাত্রি এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (সূরা কদর : ৩)
এমন একটি মহিমান্বিত মাসে আমরা আবারো উপনীত হয়েছি। গত রমজানের পর যারা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন, তাদের কাতারে আমরা নেই। অতএব শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতার ঝাঁপি খুলে দেওয়া উচিত মহান আল্লাহর সমীপে। সেজদায় লুটিয়ে পড়ে উচ্চারিত হওয়া প্রয়োজন, আল্লাহুম্মা লাকাল হামদ। তারপর প্রতিটি রোজা যথাযথ উপায়ে পালন করা। সমস্ত অনুচিত কাজ থেকে বিরত থাকা। সাহাবাগণ তাঁদের জীবনে সর্বোচ্চ কয়টি রমজান পেয়েছে? পাঁচটি, ছয়টি, আটটি। কারো জীবনে একটি বা দুটি। কিন্তু তারা সে এক দুটি রমজানই এতো সুন্দর ও
যথার্থভাবে পালন করে দেখিয়েছেন, যা কিয়ামত অবধি পুরা উম্মতের জন্য অনুসরণীয় থাকবে। তাই আসুন, গুনাহ বর্জন করি। জীবনকে নতুনভাবে সাজাই। একটি রমজান, যেন শুভ্র স্বচ্ছ পবিত্র একটি জীবন