মাহে রমজানে করণীয় ও বর্জনীয়
আমাদের জীবন অতি ছোট। তবে অনেক বেশি মূল্যবান। জীবন এক মহান নেয়ামত, যার কোন তুলনা নেই। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আরও অধিক মূল্যবান হয়ে ওঠে যখন তা ব্যয় হয় মহান রবের এবাদতে। তখন তার প্রতিটি ক্ষণ অতিক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে সৌভাগ্যের দ্বারও উন্মুক্ত হতে থাকে। আমরা পার করছি অসমান্য বরকতের মাস রমজান। আল্লাহ তায়ালা সর্ব প্রকার শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে এ মাসকে মহিমান্বিত করেছেন। কিন্তু এই শ্রেষ্ঠত্বকে আমরা কজন অনুভব করি। সুযোগ বারবার আসে না। হতে পারে এই রমজানই আমার জীবনের শেষ রমজান। তাই এর গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বুঝে একে পূর্ণরূপে কাজে লাগানো উচিত। কারণ একটি রমজান জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া মানে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হওয়া। আবার একটি রমজান লাভ করা মানে জীবনে বিশাল কিছু অর্জন করা।
রমজানে করণীয়
১- সবগুলো রোজা গুরুত্বের সাথে যথাযথভাবে পালন করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করা।
২- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা।
৩- তারাবির নামাজ গুরুত্ব সহকারে আদায় করা। রাসুল সা.বলন, "যে ব্যক্তি রমযানে ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের আশায় তারাবীর সালাতে দাঁড়াবে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে।" (বুখারী: ২০০৯)
৪- কুরআনুল কারীম শিখা-শেখানোর কাজে ব্যস্ত থাকা। হাদিসে এসেছে, রমযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরাঈল আ. রাসুল সা.এর সঙ্গে একবার সাক্ষাত করতেন। আর নবীজি তাঁকে কুরাআন শোনাতেন। (বুখারী: ৬)
৫- অধিক পরিমাণে দান করা। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, নবীজি সা. ধন-সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমযানে জিবরাঈল আ. যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রমযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরাঈল আ. তাঁর সঙ্গে একবার সাক্ষাত করতেন। আর নবী তাঁকে কুরাআন শোনাতেন। জিবরাঈল যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন তখন তিনি রহমতসহ প্রেরিত বায়ুর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন। (বুখারী: ১৯০২)
৬- রোজাদারকে ইফতার করানো। রাসূল সা.বলেন, " যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করায় সে ব্যক্তি রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করে। কিন্তু এর ফলে রোজাদারের সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না। (তিরমিজি: ৮০৭)
৭- বেশি বেশি দোয়া করা। বিশেষ করে ইফতারের পূর্বে। রাসুল সা.বলেন, "তিন ধরনের লোকের দু’আ কখনও ফিরিয়ে দেয়া হয় না। ১- রোযাদার যতক্ষণ ইফতার না করে...।(তিরমিজি: ৩৫৯৮)
৮- শেষ দশকে ইতিকাফ করা এবং লাইলাতুল কদর তালাশ করা। পরিপূর্ণ রূপে ইবাদতে নিমগ্ন হওয়া। আয়েশা রা. বলেন, "যখন রমযানের শেষ দশক প্রবেশ করত, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে নিজে জাগতেন, নিজ পরিজনদেরকেও জাগাতেন, কঠোর পরিশ্রম করতেন এবং কোমরে লুঙ্গি বেঁধে নিতেন।" (মুসলিম: ১১৭৪)
৯- সামাজিকভাবে রমজানের গুরুত্ব ও পবিত্রতা বিষয়ে জন সচেতনতা গড়ে তোলা।
রমজানে বর্জনীয়
১- রোজাকে বোঝা কিংবা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর না ভাবা। বরং মনে প্রাণে এ কথা বিশ্বাস করা যে, রমজান ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র; এমনকি পুরো পৃথিবীর জন্য কল্যাণের বাহক।
২- অলসতা পরিত্যাগ করা। সুতরাং সেহরিতে উঠতে অলসতা না করা। আগে আগে মসজিদে গমন করা। সতেজ হৃদয় ও সতেজ শরীর নিয়ে প্রতিটি আমল পূর্ণ করা।
৩- সব ধরনের হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা। রাসুল সা.বলেন, “নিষিদ্ধ ও হারাম জিনিস থেকে বেঁচে থাক, তাহলে তুমি মানুষের মধ্যে সব চেয়ে বড় আবেদ (ইবাদতকারী) গণ্য হবে।" (আহমাদ: ৮০৯৫)
৪- মিথ্যা পরিত্যাগ করা। রাসুল সা.বলেন, "যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তাঁর এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহ্র কোন প্রয়োজন নেই।" (বুখারী: ১৯০৩)
৫- ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত না হওয়া। রাসুল সা.বলেন, "সিয়াম ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাঁকে গালি দেয় অথবা তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন রোজাদার।" (বুখারী: ১৯০৪)
৬- গীবত না করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, "তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। (হুজুরাত: ১২)
৭- হিংসা করা থেকে বিরত থাকা। রমজানে বিনিদ্র রাত্রি যাপন করে এবং অনাহারে দিনাতিপাত করে যদি কেউ হিংসায় লিপ্ত হয় তার চেয়ে হতভাগা আর কেউ হতে পারে না। কারণ হিংসা সব নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। রাসুল সা.বলেন, "তোমরা অবশ্যই হিংসা পরিহার করবে। কারণ আগুন যেভাবে কাঠ বা ঘাসকে খেয়ে ফেলে, তেমনি হিংসাও মানুষের নেক আমলকে খেয়ে ফেলে। (আবু দাউদ: ৪৯০৩)
সবশেষে রোজার যে মহৎ উদ্দেশ্য; তাকওয়া, ধৈর্য-সংযম ও মাগফিরাত- তা যদি অর্জন হয় তবেই আমাদের জীবনে রমজানের আগমন সার্থক। অন্যথায় রাসূল সা.এর সেই বানী কতইনা যথার্থ! "কত রোযাদার আছে যাদের রোযার বিনিময়ে ক্ষুধা ছাড়া আর কিছুই জোটে না। কত সলাত আদায়কারী আছে যাদের রাত জাগরণ ছাড়া আর কিছুই জোটে না। (ইবনে মাজাহ: ১৬৯০)