বিফলে যায় না রোজাদারের দোয়া
রমজান পুণ্য অর্জন ও ক্ষমা প্রার্থনার মাস। বেশি বেশি ইবাদতের মাধ্যমে প্রভুর সান্নিধ্য লাভের মোক্ষম সময়। এ মাসে প্রতিটি ভালো কাজের জন্য ১০ গুণ বেশি সওয়াবের ঘোষণা রয়েছে। একই সঙ্গে রোজাদার ব্যক্তির অতীত গুনাহ মাফের ও কথা বলা হয়েছে হাদিসে।
রোজাদার ব্যক্তির সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো- আল্লাহর কাছে চাওয়া তার দোয়া কবুল করা হয়। নবী (সা.) বলেন, ‘সিয়াম পালন কারীর দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবিশায়বা : ৩/৭)। অন্য হাদিসে এসেছে- আবুহুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ১. রোজাদারের দোয়া- ইফতার করা পর্যন্ত, ২. ন্যায় পরায়ণ বাদশাহর দোয়া, ৩. মাজলুমের দোয়া। (মুসনাদে আহমদ : ৯৭৪৩)।
পবিত্র কোরআনে সুরা বাকারায় ধারাবাহিক ভাবে রমজান ও রোজা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। এর অব্যবহিত পরই আল্লাহ তাঁর নবীকে উদ্দেশ কওে বলেছেন, ‘আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস কওে আমার ব্যাপারে, (তাদেও বলো) আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, আমি তাদেও প্রার্থনা কবুল করি, যখন তারা আমার কাছে প্রার্থনা করে।’ (সুরা বাকারা : ১৮৬)। এ থেকেও বুঝে আসে, রমজান মাসে দোয়ার বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলত রয়েছে।
দোয়া বা প্রার্থনায় মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা নিহিত। আল্লাহ তায়ালা ওই মুহূর্তটি কে অধিক পছন্দ করেন যখন বান্দা মানব সভ্যতার চরম বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণও সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে কায়মনো বাক্যে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে, তার কাছে মাগফিরাত ও নাজাত কামনা করে। নবী করিম (সা.) রমজান মাসে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা সম্পর্কে বলেছেন, এ মাসে তোমরা চারটি কাজ অধিক পরিমাণে করো, তন্মধ্যে দুটি কাজ এমন, যা দ্বারা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা যাবে। আর অন্য দুটিএমন যা থেকে তোমরা মুখাপেক্ষীহীন হতে পারবেনা। প্রথম দুটি হলো ১. বেশি বেশি ‘লাইলাহাইল্লাল্লাহু’-এর জিকির করা; ২. আল্লাহর কাছে মাগফিরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর যে দুটি কাজ না কওে আমাদের কোনো উপায় নেই তাহলো- ১. জান্নাত চাওয়া, ২. জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া।
ইফতারের পূর্ব মুহূর্তের দোয়ার বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই ইফতারের সময় সিয়াম পালনকারীর দোয়া কবুল হয়।’ (বায়হাকি)। অন্য হাদিসে তিনি বলেন, ‘ইফতারের সময় আল্লাহ বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আর রমজানের প্রতি রাতেও। সিয়াম পালন কারী প্রত্যেক বান্দার দোয়া কবুল হয়।’ (মুসনাদ আহমদ)। হাদিসে কুদসিতে আছে- রোজা কেবল আল্লাহর জন্য, তাই রোজার পুরস্কার আল্লাহ নিজেই দেবেন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বান্দাদেরকে বারবার তাঁর কাছে চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সব গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা জুমার : ৫৪)।
পবিত্র রমজানের দিন-রাত ইবাদত-বন্দেগি ও ক্ষমা প্রার্থনার দিন-রাত। তাই নির্ধারিত ইবাদত ছাড়া ও সুযোগ পেলেই আল্লাহর দরবারে দোয়া-মোনাজাতে বিশেষভাবে মনোনিবেশ করা চাই। আমাদের কোন্ দোয়া কখন কবুল হয়- বলা তো যায় না। আল্লাহ আমাদের রোজা কবুল করুন, অতীত জীবনের সব গুনাহ মাফ করে দিন। আমিন।