• ||
  • Wednesday, January 22nd, 2025
  • ||

কুরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত

কুরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত
  • আমিরুল ইসলাম লুকমান
  • মানবজাতির পার্থিব ও পরকালীন সুখ-শান্তির জন্য আল্লাহ তায়ালা শরিয়তের বিভিন্ন বিধান দান করেছেন। ব্যক্তিগত-সামষ্টিক, আর্থিক-শারীরীক নানা প্রকার হুকুমগত তারতম্য রয়েছে বিধানবালীর ভেতরে। কিছু ইবাদতকে আল্লাহ তায়ালা পূর্ববর্তী নবীগণের (আ.) ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে দান করেছে। আবার কিছু ইবাদতকে ঘোষণা করেছেন মুসলিম জাতির বিশেষ বৈশিষ্ট্যরূপে, ইসলাম ধর্মের বাহ্যিক নিদর্শনস্বরূপ। ঐহিত্য ও বৈশিষ্ট্য উভয়ের সমন্বয়ে উম্মতে মুসলিমার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল পবিত্র কুরবানি। পবিত্র কুরআনে ঘোষিত হয়েছে, ‘কুরবানির উট ও গরুকে তোমাদের জন্য আল্লাহর ‘শাআইর’-এর অন্তর্ভুক্ত করেছি। তোমাদের পক্ষে তাতে আছে কল্যাণ।’ (সুরা হজ: ৩৬) 
  •  
  • কুরবানির ইবাদতের ভেতরে আছে মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) এর খোদাপ্রেমের আদর্শ, আল্লাহর জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে প্রিয় বস্তু কুরবানি করার মহান শিক্ষা এবং ইসলাম ধর্মের অনুসারীদেরকে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে বিশেষায়িত করার দৃষ্টান্ত। ইসলামের ঘোষিত দুটি ঈদ আনন্দের একটি কুরবানির ঈদ। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা কুরবানির ইতিহাস, গুরুত্ব, চেতনা ও মর্যাদার কথা বর্ণনা করেছেন। হাদিস শরিফে নবী করিম (সা.) একনিষ্ঠচিত্তে কুরবানি করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন, হুকুম-আহকাম শিক্ষা দিয়েছেন। উপযুক্ত ব্যক্তি কুরবানির বিধান লঙ্ঘন করলে তার প্রতি কঠোর ধমকিবাণী উচ্চারণ করেছেন।
  •  
  • কুরবানির গুরুত্ব
  • কুরবানির মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জনের পদ্ধতিটি প্রাচীন। পূর্ববর্তী উম্মতের ভেতরেও কুরবানির প্রচলন ছিল। কুরবানির পূর্বাতিহাস উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘(হে নবী) তাদের সামনে আদমের দুই পুত্রের বৃত্তান্ত যথাযথভাবে পড়ে শোনাও, যখন তাদের প্রত্যেকে একেকটি কুরবানি পেশ করেছিল এবং তাদের একজনের কুরবানি কবুল হয়েছিল, অন্যজনের কবুল হয়নি। সে (দ্বিতীয়জন প্রথমজনকে) বলল, আমি তোমাকে হত্যা করে ফেলব। প্রথমজন বলল, আল্লাহ তো মুত্তাকিদের পক্ষ হতেই (কুরবানি) কবুল করেন।’ (সুরা মায়িদা: ২৭)। অন্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানির নিয়ম করে দিয়েছি এই উদ্দেশ্যে যে, আল্লাহ তাদেরকে যে চতুষ্পদ জন্তুসমূহ দিয়েছেন, তারা তাতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করবে।’ (সুরা হজ: ৩৪)
  •  
  • অপর আয়াতে এসেছে, ‘সুতরাং তুমি নিজ প্রতিপালকের (সন্তুষ্টি অর্জনের) জন্য নামাজ পড় ও কুরবানি দাও।’ (সুরা কাউসার: ২) । হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) মদিনাতে দশ বছর অবস্থান করেছেন। প্রতি বছরই তিনি কুরবানি করতেন।’ (ইবনে মাজাহ: ১৫০৭)। অন্য একটি হাদিসে ইবনে উমর (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বড় শিং বিশিষ্ট সাদা-কালো দুইটি দুম্বা কুরবানি করেছেন। আমি দেখেছি, তিনি দুম্বা দুটির গর্দানে পা রেখে বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বললেন এবং নিজ হাতে জবাই করলেন।’ (বুখারি: ৫৫৫৮)
  • কুরবানি আবশ্যক হওয়া সত্ত্বেও কুরবানি আদায় না করা ব্যক্তিদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সাধ্য থাকার পরও কুরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটে না আসে।’ (ইবনে মাজাহ: ৩১২৩)
  •  
  • কুরবানির ফজিলত
  • হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) বলেন, ‘নবী করিম (সা.) বলেছেন, বনি আদম কুরবানির দিনে আল্লাহ তায়ালার নিকট কুরবানি অপেক্ষা প্রিয় কোনো আমল করে না। নিশ্চয়ই সে কুরবানির জন্তু কিয়ামতের দিন তার শিং, পশম ও খুর নিয়ে আসবে, এবং তার রক্ত মাটিতে স্পর্শ করার পুর্বেই আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়। সুতরাং তোমরা খুশি মনে কুরবানি কর।’ (তিরমিজি: ১৪৯৩)। অন্য হাদিসে হজরত জায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) বলেন, ‘সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, এই কুরবানি কী? নবী (সা.) উত্তর দিলেন, এটা হল তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.) এর আদর্শ। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কুরবানি করলে আমরা কী পাব? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, (পশুর) প্রত্যেক চুলের বদলে একটি করে নেকি পাবে। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ভেড়া-দুম্বার পশমের পরিবর্তেও কি সওয়াব পাওয়া যাবে? নবী করিম (সা.) বললেন, প্রত্যেকটা পশমের বদলে একটি করে নেকি পাওয়া যাবে।’ (ইবনে মাজাহ: ৩১২৭)
  •  
  • কুরবানি একটি মহান ইবাদত। আল্লাহ তায়ালার নিকট কুরবানির গোশত, রক্ত ইত্যাদি কোনো কিছুই পৌঁছে না। বরং আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সাথে কুরবানির বিধান পালন করাই আল্লাহর উদ্দেশ্য। যার অন্তরে তাকওয়া ও খোদাভীতি থাকে, সে আল্লাহর বিধানাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। আত্মত্যাগ ও আল্লাহ তায়ালাকে রাজি-খুশি করার জন্য নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়ার শিক্ষা রয়েছে কুরবানির ভেতর। কুরবানির আমলে রয়েছে নিজের চাহিদার উপর শরিয়তের চাহিদাকে প্রাধান্য দেয়ার দীক্ষা। আল্লাহ তায়ালার সামীপ্য অর্জন ও প্রিয়পাত্রে পরিণত হতে কুরবানি ইবাদতটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। নিজের পরিবার-পরিজনসহ অভাবগ্রস্ত অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের জন্য উৎকৃষ্ট খাবারের সংস্থান এবং তাদের জীবনে ঈদ পুলকের পূর্ণতা দানে কুরবানির অবদান অপরিসীম। কুরবানি দাতার উপর আল্লাহ তায়ালা স্বচ্ছলতা ও সম্পদের যে নেয়ামত দান করেছেন, আইয়ামুন নহরের দিনগুলিতে পশু কুরবানির মাধ্যমে সে নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় হয় যথার্থভাবে। সক্ষম ব্যক্তি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কুরবানির ইবাদত পালন না করলে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা অখুশি হন। আল্লাহ তায়ালার অখুশি নেয়ামত বঞ্চিত হওয়ার কারণ হতে পারে, হতে পারে পরকালে ভয়াবহ আজাব উপযুক্ত হওয়ার মাধ্যম। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে কুরবানির ইবাদত পালন করার তৌফিক দান করুন।
comment
Comments Added Successfully!