ঋতুস্রাব চলাকালে নারীর নামাজ-রোজার বিধান
প্রতিমাসে স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে মহিলাদের যে রক্ত বের হয় তাকে হায়েজ, ঋতুস্রাব বা মাসিক বলে। এ সময়ে শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের জন্য কিছু করণীয় এবং বর্জনীয় রয়েছে। নিচে তা বর্ণনা করা হলো।
১. মাসিক চলাকালীন সময় কোরআন শরীফ পড়া, স্পর্শ করা, বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা, স্বামীর সাথে সহবাস করা, কোন ধরনের ফরজ নফল নামাজ ও রোজা রাখা জায়েজ নাই। তবে নামাজ ও রোজার মাঝে পার্থক্য হলো, পরবর্তীতে ফরজ রোজার কাজা করতে হবে। কিন্তু ফরজ নামাজের কাজা করতে হবে না।
২. যে নামাজের ওয়াক্তে ঋতুস্রাব শুরু হবে, সেই ওয়াক্তের নামাজ পড়তে হবে না এবং পরবর্তীতে কাজাও করতে হবে না।
৩. যদি নামাজ পড়া অবস্থায় শুরু হয় তাহলে সাথে সাথে নামাজ ছেড়ে দিবে। পরবর্তীতে এই নামাজ কাজা করতে হবে না।
৪. যদি রোজা রাখা অবস্থায় ঋতুস্রাব শুরু হয় তাহলে সাথে সাথে রোজা ভেঙ্গে ফেলবে এবং পরবর্তীতে এই রোজার কাযা আদায় করতে হবে।
৫. যে নামাজের ওয়াক্তের মধ্যে ঋতুস্রাব বন্ধ হবে সেই নামাজ আদায় করতে হবে। আর যদি রমজানের দিনের বেলায় রক্ত বন্ধ হয়, তাহলে অবশিষ্ট দিন তার জন্য অন্যান্য রোজাদারের মত সকল পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। পরবর্তীতে এই দিনের রোজা কাজাও করতে হবে।
৬. মাসিকের সর্বনিম্ন সময় হলো তিন দিন। আর সর্বোচ্চ সময় হল দশ দিন । যদি তিন দিনের কম সময়ে কিংবা দশ দিনের বেশি সময়ে রক্ত দেখা যায়, তাহলে তা মাসিকের রক্ত হিসেবে গন্য হবে না এবং উল্লেখিত বিধানাবলী তার জন্য প্রযোজ্য হবে না। বরং তা ইস্তিহাযা অর্থাৎ অন্য কোন সমস্যা বা রোগের কারণে হয়েছে- ভাবতে হবে। তাই এ অবস্থায় নামাজ রোজা কোনটাই ছাড়তে পারবে না। তখন স্বামীর জন্য স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হওয়াও জায়েজ আছে। তবে অবশ্যই প্রত্যেক নামাজের জন্য নতুন ওযু করা জরুরি।
৭. মাসিক অবস্থায় কালিমা পড়া, দুরুদ শরীফ পড়া, আল্লাহর যিকির করা, ইস্তেগফার পড়া, তাসবি পড়া অর্থাৎ সুবাহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম ইত্যাদি পড়া জায়েজ আছে।
৮. মাসিক অবস্থায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা জায়েজ। অতএব কোরআনের যে আয়াতের মধ্যে দোয়া আছে, সেই আয়াত যদি কেউ তেলাওয়াতের নিয়তে না পড়ে দোয়ার নিয়তে পড়ে তাহলে জায়েজ হবে।
৯. কেউ যদি দোয়া হিসাবে আয়াতুল কুরসি পড়ে তাহলে জায়েয হবে।
১০. মহিলারা ঔষধ সেবন করার মাধ্যমে যদি তাদের ঋতুস্রাব বন্ধ রাখে তবে তা জায়েয হবে এবং এক্ষেত্রে তাদের উপর পবিত্রতার সকল হুকুম আরোপিত হবে। তবে যেহেতু তাতে শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে এবং এর বিশেষ কোন প্রয়োজনও নেই, তাই শরীয়ত এই কাজের প্রতি নিরুৎসাহিত করেছে।
১১. মহিলাদের জন্য কোন্ মাসে কত দিন রক্তস্রাব দেখা দিল- তা স্মরণ রাখা একান্ত দরকার। কারণ অনেক সময় পরবর্তী মাসের হুকুম পূর্ববর্তী মাসের ওপর নির্ভর করে।
মহিলাদের জন্য হায়েজ ও নেফাসের মাসআলা-মাসায়েল ভালোমতো বুঝে নেওয়া অতিব জরুরি। অনেকেই লজ্জায় কারো নিকট জিজ্ঞাসা করে না- এটা উচিত না। কারণ, আল্লাহ প্রদত্ত কোন বিধানের ক্ষেত্রে লজ্জা পাওয়া মানে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হওয়া। বরং এ সময়ের বিধানাবলী জেনে সে মতে আমল করা প্রত্যেকের জন্য অপরিহার্য।