• ||
  • Wednesday, January 15th, 2025
  • ||

দুর্ঘটনা রোধে ইসলামের নির্দেশনা

দুর্ঘটনা রোধে ইসলামের নির্দেশনা
  • দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে বাস-ট্রাক-মাইক্রোবাস-সিএনজি...। এতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে জানমালের। হতাহত হচ্ছে বহু মানুষ। চালকদের অদক্ষতা, অসতর্কতা, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দায়িত্ববোধে অবহেলা, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। ক্ষেত্রবিশেষ যাত্রী সাধারণ ও পথচারীর দায়ও কম নয়! তাই জীবন বাঁচাতে সব শ্রেণিরই সতর্কতা কাম্য। ইসলাম এ ক্ষেত্রেও মানুষকে সচেতন করেছে। ইসলামের নির্দেশনা মেনে চললে সুরক্ষিত হবে আমাদের জীবন-যাত্রা এবং পরকালেও মিলবে অফুরন্ত সওয়াব।
  •  
  • যানবাহনের নিয়ন্ত্রিত গতি
  • যানবাহনে চালকের ভূমিকা হতে হবে স্বাভাবিক ও সুনিয়ন্ত্রিত। সরকারিভাবে রাস্তার বিভিন্ন গতিসীমা নির্ধারিত আছে, সেই গতিসীমা মেনে চলা অপরিহার্য। দ্রুতগতিতে যানবাহন চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। চলাফেরার ক্ষেত্রে ধীরস্থিরতা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ধীরস্থিরতা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আর তাড়াহুড়ো শয়তানের পক্ষ থেকে।’ (বায়হাকি : ২০৭৬৭)। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে অত্যন্ত বিনম্রভাবে চলাফেরা করে।’ (সুরা ফুরকান : ৬৩)
  •  
  • দায়িত্ববোধসম্পন্ন চালক নিয়োগ
  • চালকদের অদক্ষতা, অসচেতনতা ও অসাবধানতার কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। সময়ানুবর্তিতা রক্ষা না করা, বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো, মাদক গ্রহণ করে গাড়ি চালানো ইত্যাদি কারণে কেড়ে নেয় অসংখ্য মানুষের প্রাণ। সড়ক হয়ে ওঠে অনিরাপদ। অথচ রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রকৃত মুসলিম ওই ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ (বুখারি : ৯)। চালক যদি দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ থাকে, তা হলে আশা করা যায় তার দ্বারা নিরপরাধ কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হবে না ইনশাল্লাহ।
  •  
  • আইন মেনে চলা
  • বাস হোক, ট্রাক হোক, ট্রেন হোক বা অন্য যেকোনো যানবাহন- সবার ট্রাফিক আইন মেনে চলা চাই। সড়কের বিপরীত দিকে গাড়ি চালানো, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বা রুট পারমিট ব্যতীত মোটরযান ব্যবহার করা, অতিরিক্ত মাল বা অনুমোদিত ওজনের বেশি নিয়ে গাড়ি চালানো এসব শরীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অবৈধ। এসব আইন ঠিকমতো মেনে চললে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে আসবে। চালক বা যাত্রী সবাইকে মনে রাখতে হবে- ন্যায়সঙ্গতভাবে নিয়ম মেনে চললেই শান্তি।
  •  
  • সড়ক পরিষ্কার রাখা
  • সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ চলাচলের পথে বিভিন্ন জিনিস রাখা। বিশেষত অনেক রেললাইনে দেখা যায় ভাসমান দোকান পেতে বসে থাকে বিক্রেতারা। ট্রেন এলে উঠে যায়, চলে যাওয়ার পর পুনরায় সেখানে বসে বেচাকেনা শুরু হয়। 
  • আবার কোথাও রেলক্রসিং পারাপারের সময় সিগন্যাল পড়ার পরও গাড়ি পারাপার অব্যাহত রাখে অনেক চালক। এসব কারণেও দেশে রেল দুর্ঘটনা ঘটে। হাদিসে এসেছে, এক দিন এক সাহাবি বললেন, হে আল্লাহর নবী! আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন, যার দ্বারা আমি উপকৃত হতে পারব। তিনি বললেন, ‘মুসলিমদের সড়ক থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূরে সরিয়ে রাখো।’
  • (মুসলিম : ৬৮৩৯)। রাস্তাঘাট থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে রাখাকে ঈমানের অঙ্গ বলে হাদিসে ঘোষণা রয়েছে। অন্য একটি হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা রাস্তার হক আদায় করো।’ সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, রাস্তার হক কী ইয়া রাসুলুল্লাহ? তিনি বললেন, ‘দৃষ্টি অবনত রাখা, কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে রাখা, সালামের উত্তর প্রদান, সৎকর্মে আদেশ ও অসৎকর্মের নিষেধ করা।’ (বুখারি : ২৪৬৫)
  •  
  • জনসচেতনতা বৃদ্ধি
  • সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। চালক, যাত্রী, পথচারী ও সড়ক নিরাপত্তার দায়িত্বশীল সবাই নিজেদের দায়িত্বে সজাগ ও সচেতন হলেই দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। চালকদের উদাসীনতা, ট্রাফিক আইন না মানা, দ্রুতগতিতে যানবাহন চালানো, ওভারটেক করা; অন্যদিকে পথচারীর মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হওয়া, যানবাহনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ইত্যাদি কারণে বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। ইসলাম সবসময়ই দায়িত্ব সচেতন হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (বুখারি : ২৫৫৮)। অন্য হাদিসে আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত- নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘খবরদার! তোমরা রাস্তায় বসে থেকে রাস্তা দখল করবে না। একান্ত যদি বসতেই হয়, তা হলে রাস্তার হক আদায় করবে।’ (বুখারি : ২২৯৭)
  • তাই আসুন, সবাই যার যার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হই। নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থায় কার্যকরি ভ‚মিকা রাখি। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন সব ধরনের দুর্ঘটনা থেকে আমাদের রক্ষা করেন।
  •  
  • লেখক: আমিন ইকবাল
comment
Comments Added Successfully!