ভালো-মন্দের পার্থক্য জানা
নদীর মোহনায় পাশাপাশি দুটি নদীর পানি আমরা দেখতে পাই। একটি নোনা, অপরটি মিষ্ট। একটি পরিচ্ছন্ন, অপরটি ঘোলাটে। একটি আরেকটির সঙ্গে মিশে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এর দৃষ্টান্ত দিয়ে বান্দাকে শিখিয়েছেন, ‘তিনি দুই সমুদ্রকে মুখোমুখি করে প্রবাহিত করেছেন, যারা পরস্পরে মিলিত হয়। তবে উভয়ের মধ্যে রয়েছে এক অন্তরাল যার কারণে তারা অতিক্রম করতে পারে না।’ (সুরা আর-রহমান : ১৯-২০)। আল্লাহ বলতে চান- দেখ আমার বান্দা, ভালো-মন্দ একসঙ্গে থাকবে। কখনও একই রকম মনে হবে। তাই বলে মন্দকে গ্রহণ করা যাবে না।
আল্লাহ তায়ালা দোষ এবং গুণ, দুটোই সৃষ্টি করেছেন। ক্ষেত্রবিশেষ দুটোকে একই রকম দেখা যায়। যেমন, বদান্যতা ও অপব্যয়, নম্রতা ও হীনতা, অহঙ্কার ও আত্মমর্যাদাবোধ, আল্লাহর জন্য সম্পর্ক নষ্ট করা এবং রাগের বশবর্তী হয়ে সম্পর্ক নষ্ট করা। এসব বিপরীতমুখী দোষ এবং গুণ দেখতে একরকম মনে হলেও এর প্রভাব, প্রতিক্রিয়া, উদ্দেশ্য এবং ভিত্তির মধ্যে রয়েছে বিরাট ব্যবধান। যেমন, দানশীলতার উদ্দেশ্য হয় অন্যের সেবা ও উপকার আর অপব্যয়ের উদ্দেশ্য হয় নিজের ভোগবিলাস ও বাবুগিরি। নম্রতার ভিত্তি হয় শিষ্টাচার ও ভদ্রস্বভাব আর হীনতার ভিত্তি হয় লোভলালসা বা লজ্জাশূন্যতা। অহঙ্কারের ভিত্তি হয় অপরকে হেয় মনে করা, এর প্রতিক্রিয়া হয় ন্যায় ও সত্যকে উপেক্ষা করা আর আত্মমর্যাদাবোধের ভিত্তি হয় অপমানজনক বিষয়কে এড়িয়ে চলা। যার প্রতিক্রিয়া হয় হীনস্বভাব পরিহার করা। আল্লাহর জন্য রাগান্বিত হওয়া, যার প্রতিক্রিয়া হয় নিজের পছন্দনীয় হলেও আল্লাহবিরোধী বিষয় পরিহার করা আর ব্যক্তিগত রাগের কারণে সম্পর্ক নষ্ট হলে তা হীনস্বার্থ-বিরোধী ভেবে সম্পর্ক নষ্ট হয়, যদিও সে ব্যক্তিটি দোষী না হয়।
ভালো-মন্দ দুটোই মানুষের সামনে আসবে। মুমিনের কাজ হবে মন্দস্বভাব পরিহার করে ভালো গুণ অর্জন করা। ভালো গুণ চেনার জন্য কোথায়ও যাওয়া লাগে না। মানুষের রুচিবোধ এবং কলবই বলে দেয়, কোনটি ভালো, কোনটি মন্দ, কোনটি গ্রহণীয় আর কোনটি বর্জনীয়। এ সম্পর্কে পবিত্র হাদিসে বর্ণনা রয়েছে। সাহাবি ওয়াবেছা (রা.) নবীজির দরবারে হাজির হলেন। নবীজি বললেন, হে ওয়াবেছা! তুমি নেক-বদ ও ভালো-মন্দের ব্যবধান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে এসছো? সাহাবি বললেন, জি, ইয়া রাসুলাল্লাহ। নবীজি তার বুকে আলতো থাপ্পড় দিয়ে বললেন, ইসতাফতি কল্বিকা। অর্থাৎ ন্যায়-অন্যায় ও ভালো-মন্দের বিচার তোমার বিবেকের কাছে জিজ্ঞাসা করো।
এ কথাটি তিনবার বলে নবীজি (সা.) বললেন, নেক, সওয়াব এবং ভালো হচ্ছে, যার ওপর বিবেক আশ^স্ত হয়। অন্তর শান্তি পায়। খারাপ ও গুনাহ হচ্ছে, যে ব্যাপারে বিবেকে খটকা লাগে, অন্তরে দ্বিধা ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়। (মুসনাদে আহমাদ : ৪/২২৮)। আল্লাহ আমাদের ভালো গুণ এবং বেশি বেশি আমলের মাধ্যমে অধিক সওয়াব অর্জনের তৌফিক দান করুন।