• ||
  • Friday, April 19th, 2024
  • ||

করোনায় মানবসেবা : আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উপায়

করোনায় মানবসেবা : আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উপায়
  • বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রকোপ চলছে। করোনা আমাদের পারস্পরিক দূরত্ব যেমন বাড়িয়েছে, বাড়িয়েছে অর্থনৈতিক দৈন্যও। অসুস্থ হয়ে লাখো মানুষ হাসপাতালে যেমন কাতরাচ্ছে, তেমনি সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছে লাখ লাখ পরিবার। মানুষের এই দুঃসময়ে বড় প্রয়োজন একে অন্যের পাশে থাকা। সেবা ও দানের হাত প্রসারিত করা। সুস্থ ব্যক্তিরা অসুস্থদের সেবাযত্ন করা, ধনীরা অসহায়-গরিবদের সাহায্য-সহায়তা করা।
  • অনেক সময় দেখা যায়, কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে শারীরিক দূরত্বের পাশাপাশি মানসিকভাবেও তাকে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়। মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন পর্যন্ত কাছে যেতে ভয় পান। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির মনোবল আরও ভেঙে যায় এবং সুস্থ হতে বহু কষ্ট সহ্য করতে হয়।
  •  
  • স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির সেবায় এগিয়ে আসা মানবতার দাবি। ইসলামে রোগীর সেবাযত্ন করাকে সর্বোকৃষ্ট নেক আমল ও ইবাদত ঘোষণা করা হয়েছে। সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা রোগী দেখতে যাও এবং জানাজায় অংশগ্রহণ করো, কেননা তা তোমাদেরকে পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ৩/৪৮)
  • একজন অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সান্ত্বনার বাণী শোনালে, খোঁজখবর নিলে, একটু সেবাযত্ন করলে তার দুশ্চিন্তা লাঘব হয়। সে অন্তরে অনুভব করবে প্রশান্তি। তাই মানবিক বিচারে রোগীর খোঁজখবর নেওয়া, সেবাযত্ন করা উচিত। একই সঙ্গে যারা করোনায় অসহায় হয়ে পড়েছে, তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে মানসেবায় এগিয়ে আসার কথাও বলেছে ইসলাম।
  •  
  • অসহায় দুর্বল মানুষের সেবা করতে এবং তার কষ্ট, অসুবিধা দূর করার জন্য রাসুল (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্টসমূহ থেকে কোনো কষ্ট দূর করবে, কিয়ামতের কষ্টসমূহ থেকে আল্লাহ তার একটি কষ্ট দূর করবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে যায়।’ (মুসলিম ও আবু দাউদ)
  • মানবসেবা অন্যতম ইবাদত। আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। যেকোনো বিপদাপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, অভাবির অভাব মোচন করা, অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করা, সমাজের দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের প্রতি দানের হাত প্রসারিত করা, প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করা, কারও ঋণের প্রয়োজন হলে তাকে করজে হাসানা তথা সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া ইত্যাদি কাজগুলো মানবসেবার অন্তর্ভুক্ত।
  •  
  • মানবসেবার মাধ্যমে অতি সহজে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামত দিবসে নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রুষা করোনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক। আপনি তো বিশ্ব পালনকর্তা, কীভাবে আমি আপনার শুশ্রুষা করব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কী জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তাকে তুমি দেখতে যাওনি। তুমি কী জান না, যদি তুমি তার শুশ্রুষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে।’ ‘হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে আহার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাওনি।?’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব, তুমি হলে বিশ্ব পালনকর্তা, তোমাকে আমি কীভাবে আহার করাব?’
  • তিনি বলবেন, ‘তুমি কী জান না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাদ্য দাওনি। তুমি কি জান না যে, তুমি যদি তাকে আহার করাতে তবে আজ তা প্রাপ্ত হতে।?’ ‘হে আদম সন্তান, তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রভু, তুমি তো রাব্বুল আলামিন, তোমাকে আমি কীভাবে পান করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল কিন্তু তাকে তুমি পান করাওনি। তাকে যদি পান করাতে তবে নিশ্চয় আজ তা প্রাপ্ত হতে।’ (মুসলিম : ৬৭২১; ইবন হিব্বান : ৭৩৬)
  •  
  • মানবসেবার গুরুত্ব বোঝাতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণকর।’ (সুরা বাকারা : ১৮৪)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তারাই মুত্তাকী, যারা অদৃশ্যের প্রতি ঈমান রাখে, নামাজ কায়েম করে এবং যা তাদের রিজিক দান করি, তা হতে খরচ করে।’ (সুরা বাকারা : ০৩)। তিনি আরও বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত করো, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি দান গোপনে করো এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম। আল্লাহ তায়ালা তোমাদের কিছু গুনাহ দূর করে দেবেন। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্মের খবর রাখেন।’ (সুরা বাকারা : ২৭১)
  • আমাদের জীবনে চলার পথে অনেকে আছে যারা বিপদে পড়ে যায়। বিশেষ করে করোনার এই মহামারির সময়ে তাদের সাহায্য করাটা আমাদের নৈতিক দায়িত্বও বটে। অনেক সময় দেখা যায় অনেকে নানা দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত হচ্ছে কিন্তু খোঁজখবর নেওয়ার কেউ নেই। এটি হওয়ার কারণ হলো, আমাদের মাঝে এ ধরনের বিষয়সমূহে উদাসীনতা চলে এসেছে। অথচ নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে না আল্লাহও তার প্রতি রহমত করেন না।’ (তিরমিজি)
comment
Comments Added Successfully!