মহররম মাসের আমল : করণীয় ও বর্জনীয়
হিজরি বর্ষপঞ্জির পহেলা মাস ‘মহররম’। মুসলিম ইতিহাসে এ মাসটি বিভিন্ন কারণে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। আসমান-জমিন সৃষ্টিসহ পৃথিবীতে অনেক স্মরণীয় ও যুগান্তকারী ঘটনা এ মাসের ১০ তারিখে সংঘটিত হয়েছিল। মহান আল্লাহ তায়ালা হিজরি সনের যে চারটি মাসকে সম্মানিত করেছেন তা হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও সফর। এ চারটি মাসের মধ্যে মহররম অন্যতম ফজিলতপূর্ণ ও বরকতময় মাস।
মহররম হিজরি বছরের প্রথম মাস। এ মাসে মুসলিম উম্মার জন্য কিছু করণীয় ও বর্জনীয় কাজ রয়েছে। এ মাসে নফল রোজা রাখার কথা বলেছেন রাসুল (সা.)। তিনি বলেছেন, ‘রমজানের রোজার পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা।’ (মুসলিম)
মহররম মাসের ১০ম দিনকে আশুরা বলা হয়। এ দিন আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালাম এবং তাঁর জাতিকে ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এ উপলক্ষ্যে ইসলামের আগমনের আগে থেকেই ইয়াহুদিরাও রোজা রাখতেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরতের পর দেখেন ইহুদিরা এদিন রোজা পালন করছে। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমরা হজরত মুসা আলাইহিস সালামের অনুসরণ করার ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। তিনি নিজে সেই (আশুরার) দিনের রোজা পালন করলেন এবং সাহাবাদেরকেও (এই আশুরার দিন রোজা) নির্দেশ দিলেন।’ (বুখারি)
তবে আশুরা উপলক্ষে ইহুদিরা যেহেতু ১ দিন (আশুরার) রোজা রাখতো। সে কারণে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইহুদিদের ব্যতিক্রম করতে বলেছেন। তাই ৯ মহররমও রোজা পালন করা উচিত। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে ৯ এবং ১০ মহররম দুই দিনই রোজা রাখবো।’ (মুসলিম)
আশুরার রোজা রাখার ফজিলত অনেক বেশি। এ দিনের রোজা রাখার ফজিলত বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আশা করি তিনি বিগত এক বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম)
এ দিনটিকে কেউ কেউ শুধু কারবালার মাতক ও শোকানুষ্ঠান হিসেবে উদযাপন করে থাকে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় নাতি হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর হৃদয়বিদারক শাহাদাত দিবস হিসেবে শরীরে আঘাত করতে থাকে; শরীর রক্তাক্ত করতে থাকে; তাজিয়া মিছিল তথা যুদ্ধের সাজ সাজ পোশাকে ঘোড়া সাজিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে; হজরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু কৃত্রিম মাজার তৈরি করে রাস্তায় প্রদর্শনীতে নেমে পড়ে; আশুরা উপলক্ষ্যে এসব আয়োজন ও আমল বর্জন করা। এ সব আমলের ব্যাপারে ইসলামের কোনো অনুমোদনই নেই।
তবে এদিন ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্মরণে তার জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা হতে পারে। কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতবরণকারীদর জন্য দোয়া করা যেতে পারে। ইসলামের বিজয়ের জন্য তাদের ত্যাগ ও অবদান তুলে ধরা এবং মুসলিম উম্মাহর মাঝে অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলা দোষণীয় নয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের বোঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।