নেক আমলের দুনিয়াবি প্রাপ্তি
যারা আল্লাহর হুকুম মেনে দুনিয়ায় নেক আমল করবে, পরকালে তারা অফুরন্ত নেয়ামত লাভ করবে। একই সঙ্গে দুনিয়াতেও কিছু প্রাপ্তি রয়েছে তাদের জন্য। যেমন-
পৃথিবীবাসীর ভালোবাসা : আল্লাহ তায়ালা নেক আমলকারীর প্রতি মানুষের অন্তরে ভালোবাসা, হৃদ্যতা এবং তার মর্যাদা ও সুখ্যাতি বাড়িয়ে দেন। এ সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন আল্লাহ কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন, তখন তিনি জিব্রাইলকে ডেকে বলেন, আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালোবাসেন তাই তুমিও তাকে ভালোবাস। তখন জিব্রাঈল (আ.) তাকে ভালোবাসেন। অতঃপর জিব্রাইল আসমানে ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালোবাসেন তাই তোমরাও তাকে ভালোবাস। তখন আসমানবাসীরাও তাকে ভালোবাসে এবং তার ভালোবাসা পৃথিবীবাসীদের মধ্যেও গ্রহণ করা হয়। (অর্থাৎ পৃথিবীবাসীর অন্তরেও তার ভালোবাসা তৈরি করে দেওয়া হয়, যার কারণে পৃথিবীবাসীরাও তাকে ভালোবাসতে থাকে)।’ (বুখারি : ৭৪৮৫)
সুখী-স্বচ্ছন্দময় জীবন : পরকালে চিরস্থায়ী সফলতা দেওয়ার পাশাপাশি আমলের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে দুনিয়ায়ও উত্তম ও সুখী-স্বচ্ছন্দময় জীবন দান করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যে নেক আমল করে সে পুরুষ হোক কিংবা নারী হোক সে ঈমানদার। আর আমি তাকে (দুনিয়ায়) পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে (আখেরাতে) উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরস্কার দেব, যা তারা করত।’ (সুরা নাহল : ৯৭)
পার্থিব দুশ্চিন্তা দূর হয় : যে বান্দা আল্লাহর জন্য হয়ে যায়, আল্লাহ তায়ালাও স্বয়ং তার জন্য হয়ে যান। অর্থাৎ যে ব্যক্তি দুনিয়াবি কাজকর্ম পেছনে ফেলে আল্লাহর গোলামি ও দাসত্বকে নিজের জন্য আবশ্যক করে নেয়, আল্লাহ তায়ালাও তার দুনিয়াবি সব সমস্যা দূর করে দেন। এ সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদতের জন্য মনোনিবেশ করো, তা হলে আমি তোমার অন্তরকে সচ্ছলতায় ভরে দেব এবং তোমার হাত রিজিক দ্বারা পূর্ণ করে দেব। হে আদম সন্তান! তুমি আমার থেকে দূরে যেও না, (যদি দূরে সরে যাও) তা হলে আমি তোমার অন্তর অভাবে পূর্ণ করে দেব এবং তোমার দুহাতকে কর্মব্যস্ত করে দেব।’ (মুস্তাদরাক হাকেম : ৭৯২৬)
সম্পদ ও সন্তানে বরকত : গুনাহের কথা স্মরণ করে তওবা-ইস্তেগফার করে আল্লাহর দিকে ফিরে এলে আল্লাহ তায়ালা তার বিগত জীবনের গুনাহ মাফ করে দেন। শুধু তাই নয়, তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দার ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততিতেও বরকত দান করেন।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার নিকট নিজেদের গুনাহের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করো। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তোমরা যদি ক্ষমাপ্রার্থনা করো, তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন।’ (সুরা নূহ : ১০-১২)। সুতরাং দুনিয়া ও আখেরাতে ওই ব্যক্তি সফল, যে তার নিজের জীবনকে গনিমত মনে করে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করে। আল্লাহ তায়ালা বোঝার, আমল করার ও আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষিত পুরস্কারে সমৃদ্ধ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।